মোরেলগঞ্জ উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে অদ্য ০৭-০১-২০২৫ তারিখ নিরাপদ পানির সংকট নিরসনে ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান, সচিব, সদস্য, উপজেলা বাজেট ক্লাব, মা সংসদ, যুব ফোরাম সদস্য, শিক্ষক, ছাত্র, কৃষক, জেলে, ব্যবসায়ী, স্বাস্থ্যগ্রাম দলের সদস্য, ভ্যন চালক, ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুকুরের মালিকসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ নিয়ে ফোকাস গ্রুপ আলোচনা হয় ইউনিয়ন পরিষদ হলরুম। বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলা খাবার পানির সংকটের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম। উপকূলীয় উপজেলাগুলির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ন এলাকা।
এখানে সারা বছর প্রায় লবন পানি থাকে। বেড়িবাধ না থাকার কারনে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ছাড়াও অতিবৃষ্টি এবং সাধারণ জোয়ারের সময় প্লাবিত হয়ে লবন পানিসহ পুকুর, ডোবা খাল তলীয় যায়। বলা যায় সারা বছর সাধারণ মানুষ পানির দূর্ভোগ নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে বছরের পর বছর। মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্য সরকারি খাস পুকুর নাই।
যেমন মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ২টি খাস পুকুর আছে। এই এলাকার জনসাধারণ নিজেদের খনন করা পুকুরের পানি খাবার, রান্না, গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করে। সেই পানি দূষিত, নষ্ট, লবনাক্ত পানি বা ময়লা পানি হউক তারা এই পানিই বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হয়। তাদের ব্যাক্তি মালিকানাধীন নিজ নিজ পুকুরের পানি ব্যাবহার করে এবং আসপাশের মানুষও এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে।
ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুকুরগুলির চার পাশের বেড়ি বাধ বা পাড়গুলি অনেক নীচু থাকে কারণ তারা টাকার অভাবে পুকুরগুলি গভীর করে খনন করতে পারে না। যার কারণে পুকুরের পাড়াগুলো জলবায়ু সহনশীল বা উচু করে তৈরি করতে পারে না। সাধারণ জোয়ারের সময় লবন পানি পুকুরে প্রবেশ করে।
পুকুরের গভীরতা কম থাকার কারণে শুকনো মৌসুমে গ্রামের অধিকাংশ পুকুর শুকিয়ে যায়। তখন মানুষের কোন উপায় না থাকার কারণে মেশিন বা পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে লবন পানি পুকুরে ঢোকায় এবং এই লবন পানিই গোসল, ধোয়া মোছা সহ গৃহস্থালির কাজ করে। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে ছোট বড় প্রায় ৮০ টি ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুকুর এলাকার মানুষ খাওয়া, রান্না ও গোসল সহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে।
এই ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুকুরগুলির আংশিক খনন, পাড় উচু করা, পাড়ের চার পাশ নেট দ্বারা বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে কয়েক হাজার মানুষ সুপেয় পানির আওতায় চলে আসতো। এ বিষয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জনসাধারণ সরকার, দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নিকট জোড়ালো দাবী জানান। গ্রামের সাধারণ মানুষ মনে করে সরকার কেন আমাদেরকে এত অবহেলা করে। কি কারনে বছরের পর বছর পানির জন্য আমাদের হাহাকার করতে হয়।
গ্রামের কিছু মানুষ মনে করে সরকার চাইলে উপজেলা পরিষদ থেকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপ), থোক বরাদ্দ, অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বরাদ্দ দিয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়ে বাস্তবায়ন করে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানি প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিতে কাজ করতে পারে।
হেলভেটাস বাংলাদেশ ও ডরপ এর সহাশতায় মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব , সংরক্ষিত নারী আসনের ৩ জন সদস্য, বিশারীঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, বাজেট ক্লাব সভাপতি উপজেলা মা সংসদ সদস্য, কৃষক, জেলে, মসজিদের ইমাম, ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার কয়েক জন প্রতিনিধির সাথে খুলনা ইউনিভার্সিটির এক দল গভেষক নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, জনস্বাস্থ্য বিষয়, কর্মসংস্থান, চাষাবাদ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এলকার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহনকারীগন বলেন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আপনারা আছমাদেরকে নিয়ে গবেষনা করতে এসেছেন এই গবেষণা আমাদের কি কাজে আসবে।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আসে আমাদের আলোচনা করে তথ্য নিয়ে যায়। সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমারা তেমন সুফল পাচ্ছি না। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি পানি, স্যানিটেশন ও অন্যান্য সেবা প্রদান করলেও জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম। আমাদর নিরাপদ পানি সহ অন্যান্য সব ধরনের সমস্যায় আছি। এখন আমরা কোন মানুষের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না। গবেষক দল বলে আমরা আপনাদের এলাকার সমস্যাগুলি সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার নিকট তুলে ধরবো। যাতে আপনাদের এলাকার উন্নয়নে কাজে আসে।
এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২০টি পুকুরের পরিমাপ ও পানি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান। এভাবে পানগুছি নদীর পশ্চিম তীরের ৫টি ইউনিয়নে সমভাবে পুকুর পরিমাপ ও পানির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য পানগুচি নদীর পূর্ব তীরের ১০টি ইউনিয়নের নিরাপদ পানি ও অন্যান্য সুবিধাগুলি তুলনামূলক কিছুটা ভালো।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে সকল অংশগ্রহনকারীগন বলেন মোরেলগঞ্জ উপজেলায় গভীর নলকূপ, স্যালো টিউবওয়েল বসে না বা বসালেও পানিতে আর্সেনিক, আয়রন এবং নানা ধরনের দুষিত পদার্থ পাওয়া যায়। এই পানি পান করা দূরের কথা অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায় না। এ অঞ্চলের মানুষের পানির একটি মাত্র উৎস হলো পুকুর। খাওয়া থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সকল কাজে পুকুরের পানি ব্যবহার করে। তারা সরকার, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নিকট মোরেলগঞ্জ উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নসহ ৬টি ইউনিয়নের নিরাপদ পানির সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যাগুলি চলতি অর্থ বছরের উন্নয়ন বাজেট থেকে বরাদ্দ দিয়ে এখনই বাস্তবায়ন শুরু করার দাবী জানান।
মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের স্যানিটারী বাড়ির মানুষ তাদের বাড়ির বৃদ্ধ লোক মারা যাওয়ার পর তার নামে গ্রামের মানুষক দাওয়াত করে না খেতে দিয়ে সেই টাকা দিয়ে ২০০ ফুট ×২০০×১০ ফুট একটি পুকুর খনন করেন এলাকার মানুষদের পানি পান করার জন্য। এ জাতীয় পুকুরে পাইপ সিস্টেম করে কয়েক শত মানুষকে নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন পুকুরে এই কাজ করা যেতে পারে।
পাশাপাশি অন্যান্য ছোট বড় ব্যাক্তি মালিকানাধিন পুকুরগুলিকে পূর্নখনন, পাড় উচু করে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা ও বিবেচনায় নিয়ে এখনই বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন করে জনসাধারণের পানির সংকট নিরশনের ব্যবস্থা গ্রহনে পদক্ষেপ নিতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
গ্রামের সাধারণ মানুষের ব্যাক্তি মালিকাধীন পুকুর (প্রাকৃতিক মিষ্টি পানির ট্যাংকি হিসাবে খ্যাত) পিএসএফ স্থাপন, পুকুরের পাড়া উঁচু করণ,বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ সহ লবণ পানি শোধন করে ভুক্তভোগী নিরাপদ পানির অভাবগ্রস্ত মানুষের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে।